মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন সর্বশেষ নবী। হজরত আদম (আ.)-এর সময়কাল থেকে নবীদের মাধ্যমে ঈমান ও রিসালাতের ধারাবাহিক যাত্রা শুরু হয়েছিল। তার শেষ হয়েছিল হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মাধ্যমে।
নবী মুহাম্মদ (সা.)নিজেকে আলাদা কোনো সত্তা হিসেবে বর্ণনা করতেন না। তিনি নিজেকে নবীদের এক পবিত্র ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবেই উপস্থাপন করেছেন। কোনো প্রেক্ষাপটে ইসলাম পূর্ব অন্য কোনো নবীর আলোচনা এলে তিনি স্নেহ, বিনয় ও সম্মানের সঙ্গে তাদের আলোচনা করতেন এবং তাদেরকে নবুয়তের দিক থেকে ভাই হিসেবে অভিহিত করতেন।
নবুয়তের ভ্রাতৃত্বের স্বীকৃতি
রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজেকে কখনো অন্য নবীদের থেকে হিংসা বা শ্রেষ্ঠত্বের অবস্থানে রেখে অহংকার দেখাননি। বরং আল্লাহ যেসব বিশেষ গুণ ও মর্যাদা তাদের দিয়েছেন সেগুলো তিনি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে তুলে ধরেছেন।
সাহাবি ইবন আব্বাস (রা.)-এর বর্ণনায় জানা যায়, কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যাকে পোশাক পরানো হবে, তিনি হবেন হজরত ইবরাহিম (আ.)। এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তিনি ইবরাহিম (আ.)-এর বিশেষ মর্যাদার কথা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন।
একইভাবে তিনি হজরত সুলাইমান (আ.)-এর বিশাল রাজত্বের কথা গর্বের সঙ্গে উল্লেখ করেছেন। তার ভাষ্য অনুযায়ী, সুলাইমান (আ.) আল্লাহর কাছে এমন এক রাজত্ব চেয়েছিলেন, যা তার পর আর কাউকে দেওয়া হবে না। আল্লাহ তা তাকে দান করেছিলেন।
ঈসা (আ.)-এর প্রতি ভালোবাসা
হজরত ঈসা (আ.) সম্পর্কে নবীজি (সা.) গভীর ভালোবাসা পোষণ করতেন। তার মতে, দুনিয়া ও আখিরাতে ঈসা (আ.)-এর সঙ্গে তার সম্পর্ক সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ।
রাসুল (সা.) বলেছেন, সব নবী পিতৃসূত্রে ভাই, যদিও তাদের মাতৃসূত্র ভিন্ন, কিন্তু তাদের ধর্ম এক।
আরেক হাদিসে নবীজি (সা.) ঈসা (আ.) ও তার মাতা মরিয়ম (আ.)-এর বিশেষ সম্মানের কথা বলেছেন। এক বর্ণনায় তিনি বলেছেন, আদম সন্তানের মধ্যে এমন কেউ নেই, যাকে জন্মের সময় শয়তান স্পর্শ করে নি, তাই সে চিৎকার করে ওঠে। তবে মরিয়ম ও তাঁর সন্তান (ঈসা)-কে শয়তান স্পর্শ করতে পারেনি।’ (সহিহ মুসলিম)
নবীদের মাঝে তুলনা করা নিষেধ
নবীজি (সা.) নবীদের মধ্যে তুলনা করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। এক ঘটনায় দেখা যায়, এক মুসলিম ও এক ইহুদি নিজেদের নবীকে শ্রেষ্ঠ দাবি করে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি রাসুলুল্লাহ (সা.)–এর কাছে পৌঁছালে তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করেন এবং বলেন, তাকে মুসা (আ.)-এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ বলা উচিত নয়।
কিয়ামতের দিনের এক বিশেষ ঘটনার কথা উল্লেখ করে তিনি বোঝান এ ধরনের তুলনা আল্লাহর ইচ্ছা ও রহস্যের বিপরীতে গিয়ে কথা বলা।
‘ইউনুস (আ.) আমার ভাই’
তায়েফ সফরের কষ্টকর স্মৃতি নবুয়তের ভ্রাতৃত্বের উজ্জ্বল উদাহরণ উপস্থাপন করে। তায়েফবাসীর নির্মম প্রত্যাখ্যান ও পাথর নিক্ষেপের পর একটি বাগানে আশ্রয় নেন নবী (সা.)। সেখানে এক খ্রিস্টান শ্রমিক তাকে আঙুর খেতে দেন।
কথোপকথনের সময় জানা যায়, লোকটি ইরাকের নিনেভা শহরের বাসিন্দা। তখন নবী (সা.) স্নেহভরে বলেন, সে তো ইউনুস ইবন মাত্তা (আ.)-এর শহরের মানুষ। বিস্মিত সেই ব্যক্তি জানতে চাইলে নবী (সা.) জানান, ইউনুস (আ.) তার ভাই, তারা দুজনেই নবী সেদিক থেকে তারা ভাই।
একবার কেউ নবী (সা.)–কে সৃষ্টির সেরা বলে সম্বোধন করলে তিনি সঙ্গে সঙ্গে সংশোধন করে বলেন এই মর্যাদা ইবরাহিম (আ.)-এর।
বিনয় ও মানবতার শিক্ষা
শেষ নবী হয়েও নবী মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন অতুলনীয় বিনয়ের প্রতীক। তিনি নিজেকে আল্লাহর বান্দা ও রাসুল হিসেবে পরিচয় দিতে ভালোবাসতেন এবং মানুষ যেন তাকে আল্লাহ প্রদত্ত মর্যাদার চেয়ে উঁচুতে না তোলে সে বিষয়ে সতর্ক করতেন।
মদিনায় হিজরতের পরও তিনি খ্রিস্টান ও ইহুদি সম্প্রদায়ের প্রতি সম্মান বজায় রেখেছেন। নাজরান থেকে আসা ৬০ সদস্যের এক খ্রিস্টান প্রতিনিধিদলকে তিনি মদিনায় স্বাগত জানান। পারস্পরিক সম্মান বজায় রেখে উভয় পক্ষ নিজেদের বিশ্বাস নিয়ে আলোচনা করে এবং শান্তিপূর্ণভাবেই তারা ফিরে যায়।
ডেস্ক/ই.ই
মন্তব্য করুন: