[email protected] ঢাকা | শুক্রবার, ২৪শে অক্টোবর ২০২৫, ৯ই কার্তিক ১৪৩২
thecitybank.com

সহমর্মিতার গুণ অর্জন করবেন যেভাবে

চাঁপাই জার্নাল ডেস্ক:

প্রকাশিত:
২৩ অক্টোবার ২০২৫, ১৬:১৯

ছবি: সংগ্রহীত
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, তোমাদের মধ্য থেকেই তোমাদের নিকট একজন রসূল এসেছেন, তোমাদেরকে যা কিছু কষ্ট দেয় তা তার নিকট খুবই কষ্টদায়ক। সে তোমাদের কল্যাণকামী, মু’মিনদের প্রতি করুণাসিক্ত, বড়ই দয়ালু। (সূরা আত-তাওবা, আয়াত : ১২৮)
 
মানুষের দুঃখ-বেদনা অনুভব করা এবং তাদের দৃষ্টিকোণ থেকে ভাবতে পারার যে ক্ষমতা, তাকেই সহমর্মিতা বলা হয়। সহমর্মিতা এমন এক গুণ এর মাধ্যমে মানবিক সম্পর্কের বন্ধন দৃঢ় হয় এবং সমাজে প্রশান্তি ও সৌহার্দ্য তৈরি হয়। কিন্তু বর্তমান সময়ের ঘৃণা, হিংসা ও বিভেদের ভরপুর পৃথিবীতে এই সুন্দর গুণটি যেন ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে।
 
সহানুভূতি ও সহমর্মিতার পার্থক্য
 
অনেকে সহানুভূতি ও সহমর্মিতাকে একই মনে করেন, কিন্তু বাস্তবে এর মধ্যে গভীর পার্থক্য আছে।
 
সহানুভূতি মানে অন্যের কষ্ট দেখে মায়া অনুভব করা।
সহমর্মিতা মানে সেই কষ্টকে নিজের মধ্যে অনুভব করা, অন্যের জায়গায় নিজেকে কল্পনা করে তার কষ্ট বুঝার চেষ্টা করা।
 
সহমর্মিতার দুই ধরন
 
১. জ্ঞানভিত্তিক সহমর্মিতা
 
অন্যের পরিস্থিতি বুঝে নেওয়ার চেষ্টা। যেমন, একজন শিক্ষক পরীক্ষার হলে ছাত্রের বিপাকে পড়া দেখে তার অবস্থায় নিজেকে কল্পনা করেন।
 
২. আবেগভিত্তিক সহমর্মিতা 
 
অন্যের অনুভূতি নিজেও অনুভব করা। যেমন, সন্তান পড়ে গিয়ে আহত হলে মা নিজেও সন্তানের ব্যথা নিজের ভেতর অনুভব করেন।
 
রাসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন সহমর্মিতার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ
 
মানব ইতিহাসে সহমর্মিতার চূড়ান্ত রূপ ও প্রতিচ্ছবি পাওয়া যায় প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনে। কোনো শিশুর কান্নার শব্দ শুনতে পেয়ে মায়ের কষ্ট হবে ভেবে তিনি নামাজ সংক্ষিপ্ত করতেন। (সহিহ বুখারি)
 
ইকরিমা ইবনু আবু জাহল ইসলাম গ্রহণের পর নবীজী সাহাবাদের বলেছিলেন, তাকে আর ‘আবু জাহলের ছেলে’ বলে ডেকো না, এতে তার মন কষ্ট পাবে।’এমনকি ইসলামবিরোধী সেই আবু জাহলের প্রতিও নবীজীর মমত্ববোধ ছিল, কারণ তিনি একজন পিতাও ছিলেন।
 
সীরাতের কিতাবে আরেকটি ঘটনা বর্ণিত হয়েছে, আনসার সাহাবি বাশীর (রা.) যুদ্ধে শহীদ হন। তার ছোট ছেলে বাবার জন্য অপেক্ষা করতে করতে কাঁদছিল। নবীজী (সা.) নিজে উট থেকে নেমে তাকে বুকে জড়িয়ে ধরেন এবং বলেন, কেঁদো না, ভয় পেয়ো না। চাইলে আমি তোমার বাবা হব, আর আয়েশা তোমার মা। 
 
উপরে উল্লেখিত ঘটনাগুলো সহমর্মিতার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। এই ঘটনাগুলোতে অন্যের দুঃখ নিজের হৃদয়ে অনুভব করার বিষয়টি রয়েছে।
 
নবীজীর জীবনের আরও উদাহরণ
 
তিনজন একসঙ্গে বসে থাকলে তৃতীয়জনের কথা ভেবে তিনি দুজন গোপনে কথা বলতে নিষেধ করেছেন। কারণ, এতে তৃতীয় জনের মন খারাপ হবে। (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)।
এক বেদুইন মসজিদে প্রস্রাব করলে তাকে ধমক দেননি, বরং নবীজী শান্তভাবে তাকে বুঝিয়ে ছিলেন। (সহিহ মুসলিম)।
মুনাফিক নেতা আবদুল্লাহ ইবনু উবাইয়ের মৃত্যুর পর তার ছেলের অনুরোধে কাফনের জন্য নবীজী (সা.) নিজের জামা দিয়েছিলেন।
তিনি শিশুদের গল্প মনোযোগ দিয়ে শুনতেন এবং ঘরের কাজে স্ত্রীদের সাহায্য করতেন।
সহমর্মিতা চর্চার পাঁচ ধাপ
 
১. মনোযোগ দিয়ে অন্যের কথা শোনা, অন্য কেউ কিছু বললে সত্যিকার অর্থে শুনো।
২. বিচার না করা। কারো কাছ থেকে কিছু শোনার সময় বিচারক না হয়ে সহযোগী হয়ে শুনার চেষ্টা করতে হবে।
৩. বোঝার চেষ্টা। কেউ কিছু বললে তার কথার অন্তর্নিহিত অনুভূতি বুঝার চেষ্টা করা।
৪. নিজেকে অন্যের স্থানে কল্পনা করা। অন্যের কষ্ট বা আনন্দ নিজের মধ্যে অনুভব করো।
৫. উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া দেওয়া। সব সমস্যার সমাধান সম্ভব না, কিন্তু সহানুভূতির প্রতিক্রিয়া দেওয়া সম্ভব।
 
অতিরিক্ত সহমর্মিতা কখনো কখনো মানুষকে ভেঙেও দিতে পারে। তাই নবীজী (সা.) মানুষকে খুশি করার আগে আল্লাহকে খুশি করা শিক্ষা দিয়েছেন। এভাবেই আমরা ভারসাম্যপূর্ণ, সুস্থ সহমর্মিতার জীবন গড়ে তুলতে পারি। এটি শুধু একটি সুন্নত নয়, বরং মানবতার সর্বোচ্চ রূপ।
 
সূত্র : দ্য মুসলিম ভাইব
 
ডেস্ক/ই.ই

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর