[email protected] ঢাকা | বুধবার, ২২শে অক্টোবর ২০২৫, ৭ই কার্তিক ১৪৩২
thecitybank.com

যেভাবে আল আকসা জয় করেছিলেন সালাহউদ্দীন আইয়ুবী

চাঁপাই জার্নাল ডেস্ক:

প্রকাশিত:
১৪ অক্টোবার ২০২৫, ১৭:৩৩

ছবি: সংগ্রহীত

১০৯৯ সালে ক্রুসেডারদের হাতে জেরুজালেম পতনের পতন হয়। পরবর্তী ১০০ বছর শহরটি মুসলমানদের হাত ছাড়া ছিল। তবে এই ১০০ বছরে মনের গভীরে জেরুজালেম পুনরুদ্ধারের কামনা-বাসনা লালন মুসলিমরা।

প্রায় ১০০ বছর পর ১১৮৭ সালের ২ অক্টোবর সুলতান নাসির সালাহউদ্দিন আল-আইউবির নেতৃত্বে শহরটি পুনরায় ফিরে আসে মুসলিমদের হাতে। যা ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ একটি মোড় ঘুরিয়ে দেয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে যুদ্ধ, কৌশল, ন্যায় ও মানবিকতার নিদর্শন।

১১৮৭ সালের ৪ জুলাই হিত্তিনের সমতলভূমিতে সংঘটিত গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধে সালাহউদ্দীনের বাহিনীর কাছে পরাজয় বরণ করে ক্রুসেডার বাহিনী। এই যুদ্ধে তাদের রাজা গাই দে লুজিনিয়ানসহ বড় নেতাদের আটক করা হয়। হিত্তিনের বিজয় ক্রুসেডারদের শক্তি ও মনোবল ভেঙে দেয় এবং সালাহউদ্দিনের জন্য ধীরে ধীরে শহরগুলো পুনরুদ্ধারের পথ সুগম করে।

হিত্তিন যুদ্ধে বিজয়ের পর সালাহউদ্দিন আইয়ুবি সরাসরি জেরুসালেমের দিকে আগানোর আগে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক কৌশল অবলম্বন করেছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন সমুদ্রপথে নতুন করে ক্রুসেডার বাহিনী আগমন করতে পারে। তাই তিনি আগে আক্কা, ইয়াফা, আস্কালান সমুদ্র বন্দরের বিজয় নিশ্চিত করেন।

এই কৌশলগত পরিকল্পনার মাধ্যমে তিনি প্রমাণ করেছিলেন, জেরুজালেম পুনরুদ্ধারে ধর্মীয় উদ্দীপনা, আবেগের পাশাপাশি সুপরিকল্পিত সামরিক অভিযান গুরুত্বপূর্ণ।

আল-আকসা মসজিদ কেন এত গুরুত্বপূর্ণ
১৫ সেপ্টেম্বর ১১৮৭ সালে সালাহউদ্দিন তার বাহিনী নিয়ে শহরের চারপাশে ঘাঁটি গড়েন এবং নিরাপত্তা চৌকিগুলো থেকে সমীক্ষা করে শহরের দুর্বলতা চিহ্নিত করেন। তিনি উত্তর-পাশে ‘বাব আল-আমুদ’ থেকে আক্রমণ শুরু করার নির্দেশ দেন।

মুসলিম বাহিনী ১০ হাজার ঘোড়সওয়ার ও ১০ হাজার বর্মধারী পদাতিক নিয়ে ঘাঁটি তৈরি করে এবং তিন দিনের লড়াইয়ে ক্রুসেডারদের প্রতিরোধ ভেঙে দেন।

কোনো হত্যাযজ্ঞ বা লুটপাট ছাড়াই ২ অক্টোবর ১১৮৭ সালে মুসলিমরা জেরুসালেমে প্রবেশ করেন। সালাহউদ্দিন আইয়ুবি শহরের মানুষদের নিরাপদে বের হওয়ার ব্যবস্থা করেন। তিনি প্রথমেই মসজিদুল আকসায় যান, ক্রুশ ও মূর্তিগুলি সরিয়ে পবিত্র স্থানটি আবারো ফিরে পায় মুসলমানরা।

জেরুসালেমের বন্দী বাসিন্দারা মুক্তিপণ দিয়ে সালাহউদ্দিনের হাতে আত্মসমর্পণ করেন। জেরুজালেম জয়ের পর প্রায় ৬০ হাজার মানুষ নিরাপদে শহর ত্যাগ করে।মুক্তিপণ দেওয়ার মতো পুঁজি ছিল না এমন বন্দীদের নিজ অর্থায়নে মুক্ত করেছিলেন মুসলিম সেনারা। সালাহউদ্দিন নিজেও হাজার হাজার বন্দীকে মুক্তি দেন।

৯ অক্টোবর জেরুসালেমে প্রথম জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান বিচারক মুহইউদ্দিন বিন জাকি বলিষ্ঠ খুৎবা দেন, আলোচনায় জিহাদের গুরুত্ব ও আল্লাহর প্রতিশ্রুতির কথা স্মরণ করানো হয়। উপস্থিত মুসলমানরা আবেগাপ্লুত হয়ে কেঁদে ফেলেন।

সালাহউদ্দিন শহর পুনঃঅধিকারের পর দ্রুত পুনর্গঠন শুরু করেন। শহরের প্রাচীর ও কোঠা মেরামত করা হয়, মসজিদ আল-আকসার নিরাপত্তায় জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি নিজেও মসজিদুল আকসার নিরাপত্তায় যুক্ত হন।

আল আকসা ও পবিত্র ভূমি জেরুজালেমের বিজয়ে সালাহউদ্দিন আইয়ুবির ন্যায় ও মানবিকতা এমনভাবে প্রতিফলিত হয়েছে যে, তার পদক্ষেপকে বিশ্ব ইতিহাসে মহানুভবতার উদাহরণ হিসেবে ধরা হয়। তিনি শহরের খ্রিস্টান এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করেন।

এর ফলে ১১৮৭ সালের জেরুসালেম পুনরুদ্ধার শুধু একটি সামরিক বিজয় নয়, বরং ন্যায়, সহনশীলতা ও পরিকল্পনার এক উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে ইতিহাসে অম্লান হয়ে আছে।

সালাহউদ্দিন আইয়ুবির এই অর্জন মুসলিম উম্মাহর জন্য প্রেরণার উৎস। এবং তার বিজয় পৃথিবীকে দেখিয়েছে যে, ধর্মীয় ও নৈতিক নীতির সঙ্গে কৌশলগত পরিকল্পনা মিলিয়ে বড় লক্ষ্য অর্জন সম্ভব।

আল জাজিরা অবলম্বনে

ডেস্ক/ই.ই


মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর