শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবসের আলোচনা সভায় বক্তব্যকালে অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।
স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও বুদ্ধিজীবী হত্যা এখনও রহস্যাবৃতই রয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। রোববার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটের হলরুমে ঢাকা মহানগরী উত্তর জামায়াত আয়োজিত শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও বুদ্ধিজীবী হত্যার রহস্য এখনও রহস্যাবৃতই রয়ে গেছে। স্বাধীনতার পর কোনো সরকারই এই হত্যাকাণ্ডের বিচারে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি, বরং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য সব দোষ জামায়াতের ঘাড়ে চাপিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যে ভারত ও তাদের এ দেশীয় এজেন্ট জড়িত ছিল, তা ভারতীয় বিশিষ্ট ব্যক্তি ও লেখকদের লেখনি থেকে প্রমাণ পাওয়া যায়। মূলত, ১৪ ডিসেম্বর পাক বাহিনীর আত্মসমর্পণের কথা থাকলেও ভারতীয় পরিকল্পনায় তা ২ দিন বিলম্বিত হয়। আর এই দু’দিনে আমাদের শিক্ষক, কবি, সাহিত্যিক, প্রকৌশলী, আইনবিদসহ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা করা হয়েছিল।
জামায়াতের এই সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, সে সময়ে যাদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল তারা স্বাধীনতার স্বপক্ষে হলেও ভারত ও তাদের এ দেশীয় এজেন্টদের আদর্শবিরোধী ছিল। তাই তাদের পথচলাকে নির্বিঘ্ন করার জন্যই এসব বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছিল। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, স্বাধীনতা পরবর্তী কোনো সরকারই বুদ্ধিজীবী হত্যার তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। বরং, আওয়ামী লীগ তদন্ত রিপোর্ট চাপা দিয়ে রেখেছে। এমনকি চলচ্চিত্রকার শহীদুল্লাহ কায়সারের ভাই জহির রায়হানের অন্তর্ধানের ঘটনা আরও রহস্যাবৃত্তই রয়ে গেছে। এ সময় বুদ্ধিজীবী হত্যার ঘটনার রহস্য উদঘাটনে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠনের আহ্বান জানান তিনি।
ওসমান হাদির ওপর হামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মূলত জুলাই বিপ্লবকে নস্যাৎ করার জন্যই জুলাই বিপ্লবের অন্যতম সিপাহসালার ওসমান হাদির ওপর বর্বর হামলা চালানো হয়েছে। অথচ, তাকে বারবার প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হলেও সরকার তার নিরাপত্তার জন্য কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। সরকারের পক্ষে জনগণের নিরাপত্তার জন্য বিদেশ থেকে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি আমদানির কথা বলা হলেও এসব কখনোই জনগণের কল্যাণে আসেনি, বরং আওয়ামী ফ্যাসিবাদী আমলে এসব প্রযুক্তি জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে জুলুম-নির্যাতন ও গণহত্যা চালানো হয়েছে। এ সময় ওসমান হাদির উন্নত চিকিৎসা ছাড়াও জুলাই যোদ্ধাসহ জাতীয় নেতাদের নিরাপত্তা জোরদারে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান তিনি। অন্যথায় আগামী নির্বাচন ঝুঁকির মুখে পড়বে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বৃহৎ প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক হবে সমতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে। আমরা দেশটির সঙ্গে প্রভু-ভৃতের সম্পর্ক চাই না। আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ভারতের অনাকাঙ্ক্ষিত হস্তক্ষেপও কাম্য নয়।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, বুদ্ধিজীবীরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাই আমরা তাদের রাজনৈতিকভাবে বিভাজন করতে চাই না। তারা যে আদর্শেরই হোন না কেন, তাদের আমরা সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন করতে চাই। এ সময় দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে রাজনৈতিক ভেদাভেদ ভুলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
এছাড়া সভাপতির বক্তব্যে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন, জাতি হিসেবে যারা আমাদের মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে দিতে চায়নি, তারাই এই নির্মম ও নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের অপশক্তি। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, বিজয়ের ৫ দশক অতিক্রান্ত হলেও এ হত্যাকাণ্ডের কুশীলবরা আজও ধরা-ছোয়ার বাইরে রয়ে গেছে। স্বাধীন দেশে বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক ও কথা সাহিত্যিক শহীদুল্লাহ কায়সারের ভাই জহির রায়হানের হত্যার রহস্যের জট এখনো খোলেনি।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমানের সঞ্চালনায় সভায় অন্যদের মধ্যে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা-১২ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী সাইফুল আলম খান মিলন ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন। এতে অন্যদের মধ্যে ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমির আব্দুর রহমান মূসা ও ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা, ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি নাজিম উদ্দীন মোল্লা, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য জিয়াউল হাসান, মুহাম্মদ আতাউর রহমান সরকার, জামাল উদ্দিন, মুহিবুল্লাহ ও নাসির উদ্দীন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ডেস্ক/ই.ই
মন্তব্য করুন: