[email protected] ঢাকা | মঙ্গলবার, ১৬ই ডিসেম্বর ২০২৫, ২রা পৌষ ১৪৩২
thecitybank.com

মির্জা ফখরুল বললেন, একাত্তরে তাঁর বাবা ছিলেন ভারতে

চাঁপাই জার্নাল ডেস্ক:

প্রকাশিত:
১০ নভেম্বার ২০২৫, ২০:৪১

ছবি: সংগ্রহীত
নিজের বাবার বিরুদ্ধে ‘মিথ্যাচার’ হচ্ছে দাবি করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের প্রায় পুরোটা সময় তাঁর বাবা মির্জা রুহুল আমিন ছিলেন ভারতে।
 
আজ সোমবার বিকেলে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে এ কথা বলেন বিএনপির মহাসচিব। কী মিথ্যাচার হচ্ছে, তা উল্লেখ করেননি তিনি। তবে পোস্টের বক্তব্য থেকে ধারণা করা যেতে পারে, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর বাবাকে ‘স্বাধীনতাবিরোধী’ আখ্যা দিয়ে চলা প্রচারণাকে ইঙ্গিত করে থাকতে পারেন তিনি।
 
মির্জা ফখরুল লিখেছেন, ‘আমার বাবা সম্বন্ধে মিথ্যাচার শুরু হয় গত আওয়ামী রেজিমে (শাসনামল)। দুঃখজনকভাবে গত এক বছর ধরে একটি গোষ্ঠী, যারা নিজেদের জুলাইয়ের আন্দোলনের অংশীদার মনে করে, তারাও এই মিথ্যাচারে অংশ নিচ্ছে!’
 
মির্জা ফখরুলের বাবা মুসলিম লীগ নেতা মির্জা রুহুল আমিন একাত্তরে শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন, এ কথা আওয়ামী লীগ নেতারা বলে আসতেন। এখন নতুন করে সেই ধরনের কথা ওঠার পরই প্রতিক্রিয়া এল তাঁর।
 
দুদিন ধরে জন্মস্থান ঠাকুরগাঁওয়ে থাকা ফখরুল ফেসবুকে লিখেছেন, ‘কিছু কথা বলা খুব জরুরি আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ, তরুণ প্রজন্মের জন্য। এসব কথা বলার কখনো প্রয়োজন মনে করিনি। জীবনের এই প্রান্তে দাঁড়িয়ে যখন দেখছি সমাজে কিছু মানুষ নিজেদের স্বার্থে মিথ্যার চাষ করছে, তখন বলা আরও জরুরি।’
 
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশট
এরপরই মুক্তিযুদ্ধের সময়কার কথা তুলে ধরে তিনি লিখেছেন, ‘আমার আব্বা মরহুম মির্জা রুহুল আমিন ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ আমার নানাবাড়ি যান আমার দুই ছোট ভাই আর দুই বোন এবং মাকে নিয়ে। তারপর এপ্রিলে চলে যান ভারতের ইসলামপুরে! রিফিউজি ক্যাম্পে (শরণার্থীশিবির) ছিলেন যুদ্ধের প্রায় পুরোটা সময়! ৩ ডিসেম্বর ঠাকুরগাঁও স্বাধীন হয়! আমার বাবা ঠাকুরগাঁওয়ে ফিরে আসেন তখনই! যখন ফিরে আসেন, দেখেন সব লুট হয়ে গেছে! আমার মরহুম মা তাঁর গয়না বিক্রি করেন! আমি যোগ দিই অর্থনীতির শিক্ষকতায়! প্রথম বেতন তুলে দিই আম্মার হাতে! আল্লাহর রহমতে জীবন চলে যায়! ১৯৭১–এর পরে বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ এভাবেই ধ্বংসস্তূপ থেকে তৈরি করেছে জীবন!’
 
পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য, বাংলাদেশের সাবেক সংসদ সদস্য, ঠাকুরগাঁও পৌরসভার সাবেক মেয়র মির্জা রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে কখনো কোনো মামলা ছিল না দাবি করে তাঁর ছেলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ঠাকুরগাঁও জেলার যা কিছু আধুনিক, এর শুরু আমার বাবার হাতে! এই জেলার প্রতিটি সৎ মানুষ জানে আমার বাবার কথা! আমার বাবা মারা যাওয়ার পরে তাঁর স্মৃতি রক্ষার জন্য যে ফাউন্ডেশন হয়, তার নেতৃত্বে ছিলেন ঠাকুরগাঁওয়ের সব নামকরা রাজনীতিবিদ! ১৯৯৭–এ তাঁর মৃত্যুতে সরকারি শোক প্রকাশ করা হয়!’
 
শিক্ষকতা ছেড়ে রাজনীতিতে নামা মির্জা ফখরুল নিজের রাজনৈতিক সংগ্রাম তুলে ধরে বলেন, ‘গত বছর জুলাইয়ে আমাদের ছেলেমেয়েরা বাংলাদেশকে আশা দেখিয়েছে! আমি আশা করব, নতুন প্রজন্মের বাংলাদেশে মিথ্যার চাষ আমাদের ছেলেমেয়েরা করবে না! এরা সত্যের পথে থাকবে, প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে মেধা, বুদ্ধিমত্তা, সততা আর পলিসি (নীতি) দিয়ে! শঠতা আর মিথ্যা দিয়ে পপুলিজম কেনা যায়, কিন্তু দেশ গড়া যায় না! আসুন, আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা, দেশপ্রেম আর নতুন প্রজন্মের সাহস ও দেশপ্রেম দিয়ে তৈরি করি একটি মর্যাদাপূর্ণ সৎ মানবিক বাংলাদেশ!’
 
পবিত্র কোরআনের সুরা আল–হুজুরাতের একটি আয়াত উদ্ধৃত করে পোস্টটি শেষ করেছেন বিএনপি মহাসচিব, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা অধিক অনুমান থেকে দূরে থাক। নিশ্চয়ই কোনো কোনো অনুমান তো পাপ।’
 
পোস্টে ‘মুক্তিযুদ্ধে দিনাজপুর’ নামের একটি বইয়ের একটি পৃষ্ঠাও যুক্ত করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেখানে উত্তম পুরুষে লেখা হয়েছে, ‘আমার বাবাও কিন্তু মুসলিম লীগার ছিলেন। তিনি সে সময় প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। আমার বাবাও মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতে চলে গিয়েছিলেন।’
 
ডেস্ক/ই.ই

মন্তব্য করুন:

সম্পর্কিত খবর