দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বের প্রশংসা করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘তারেক রহমান আমাদের নেতা যিনি আজকে নতুন করে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করার জন্য কাজ করছেন। তিনি সেই একই ধারার (জিয়াউর রহমান-খালেদা জিয়া) নেতা।’
বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) দুপুরে এক গ্রন্থ প্রকাশনার আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।
কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের মুক্তিযোদ্ধা মিলনায়তনে বিএনপির উপ-প্রকাশনা কমিটির প্র্রকাশনায় ‘মহাকালের মহানায়ক শহীদ জিয়াউর রহমান’ শীর্ষক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়। ৬৪০ পৃষ্ঠার এই গ্রন্থটি সম্পাদনা করেছেন মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম ও আবদুল হাই শিকদার। হামিদুল ইসলামের প্রচ্ছদে গ্রন্থটি মূল্য রাখা হয়েছে দুই হাজার টাকা।
স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমার এখনো মনে আছে যে, তিনি চীনে একবার গিয়েছিলাম ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) সঙ্গে, আমরাও ছিলাম। ওই সময়ে প্রচন্ড শীত ছিলো। সেজন্য গ্রেট হলের ভেতরে ম্যাডামকে গার্ড অফ অনার দেওয়ার অনুষ্ঠানটি হয়। ম্যাডাম যখন চীনের প্রধানমন্ত্রীকে আমাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলেন… যখন তারেক রহমানের সামনে এসে বললেন, হি ইজ মাই সান (আমার ছেলে)। তখন চীনের প্রধানমন্ত্রী তার (তারেক রহমানের) হাতটা শক্ত করে ধরে ঝাঁকিয়ে বললেন, ‘কেরি অফ দি ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ড ফাদার অ্যান্ড মাদার… আজকে তারেক রহমান সাহেব সেই পতাকা তুলে ধরেছেন যে পতাকা হচ্ছে স্বাধীনতার পতাকা, যে পতাকা হচ্ছে এই দেশের মানুষের অধিকারের পতাকা, গণতন্ত্রের পতাকা, উন্নয়নের পতাকা।‘
মির্জা ফখরুল আশা প্রকাশ করে বলেন, ইনশাল্লাহ আমরা তারেক রহমানের নেতৃত্বে নিশ্চয়ই এই বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত করব এবং গণতন্ত্রকে আরো উজ্জীবিত করব। অর্থনীতিকে গণতান্ত্রিকীকরণ করব।
এখন দ্রুত একটা রাজনৈতিক সরকার দরকার উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, শিক্ষা খাত— সবকিছু নির্ভর করছে আগামীতে একটি নির্বাচিত সরকারের ওপর। আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই যে, জাতীয় সংস্কার কমিশন তারা অতি অল্প সময়ের মধ্যে অন্তত কিছু সংস্কারের কাজ শেষ করতে পেরেছেন। এটার প্রয়োজন ছিল পরিবর্তনের পরে।
সংস্কার সব বিএনপির হাত ধরেই: মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেব তিনি ২০২২ সালে যে ৩১ দফা দিয়েছিলেন তারই ধারাবাহিকতায় কিন্তু আমরা এই সংস্কারগুলো দিয়েছি। ম্যাডাম (বেগম খালেদা জিয়া) দিয়েছিলেন ২০১৬ সালে ভিশন-২০৩০ আর আমাদের নেতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দিয়েছিলেন ১৯ দফা কর্মসূচি। সব কিছু মিলিয়ে এসব সংস্কার। বিএনপির জন্ম তো সংস্কারের মধ্যে, সংস্কার দিয়েই। একদলীয় শাসন ব্যবস্থা থেকে দেশকে বহুদলীয় শাসনব্যবস্থায় প্রেসিডেন্ট জিয়া নিয়ে এসেছিলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা তথা ফ্রিডম অফ প্রেস প্রেসিডেন্ট জিয়া দিয়েছিলেন, জনগণের মৌলিক অধিকারগুলো প্রেসিডেন্ট জিয়া দিয়েছিলেন।
মহাসচিব বলেন, বেগম খালেদা জিয়া প্রেসিডেন্সিয়াল ফর্ম অব গভর্নমেন্ট থেকে পার্লামেন্টারি ফর্ম গভর্নমেন্টে নিয়ে এসেছিলেন, মেয়েদের লেখাপড়া দশম শ্রেণি পর্যন্ত বিনা খরচে ব্যবস্থা করেছিলেন। মেয়েদেরকে চাকরি দেওয়া, মহিলা অধিদপ্তর করা …সব তো বিএনপি এবং ম্যাডামের কাছে দেওয়া। অথচ এমনভাবে কথা বলা হয় যে, বিএনপি একটা ভিলেন, কিছু কিছু লোক বলার চেষ্টা করেন, আমি বিস্মিত হই। আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই, বাংলাদেশে যা কিছু ভালো হয়েছে সব বিএনপির হাত দিয়ে হয়েছে, জনগণ হাত হয়েছে এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার হাত দিয়ে হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, প্রেসিডেন্ট জিয়ার নাম মুছে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল আওয়ামী লীগ। জিয়ার মাজার পর্যন্ত তুলে নিয়ে যাবে, তার নাম গন্ধ থাকবে না…. তাই করেছিল না? পারে নাই। কারণ সত্যিকার অর্থেই জিয়াউর রহমান ক্ষণজন্মা, আল্লাহ যাকে পাঠিয়েছেন মানুষের কল্যাণের জন্য তাকে কি এত সহজেই ছুড়ে ফেলা যায়? যায় না।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ও প্রকাশনা উপকমিটির আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও প্রশিক্ষণ সম্পাদক এবিএম মোশররফ হোসেনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য্ অধ্যাপক আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুল হাই শিকদার, বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ আলমগীর পাভেল, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, জাসাসের সাবেক সভাপতি রেজাবুদ্দৌলা চৌধুরী, কলামিস্ট সাখাওয়াত হোসেন সায়ান্থ, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত।
ডেস্ক/ই.ই
মন্তব্য করুন: