জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেছেন, জনগণের চাপে বিএনপি গণভোটে রাজি হলেও আবার প্যাঁচ লাগিয়েছে। আমরা গণভোটের বিষয়ে কোনো প্যাঁচগোজ বুঝি না। সরল কথা- জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট দিতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা বলছি একটি আদেশের মাধ্যমে জুলাই সনদকে সাংবিধানিক মর্যাদা দিতে হবে। কিন্তু যেসব সংস্কার হচ্ছে বা জুলাই সনদের যে বৈধতার ঘোষণা বা কে দেবেন? যদি আইনে কাভার করে বা আইনের ব্যত্যয় না ঘটে, তাহলে এই ঘোষণাটা দেবেন প্রধান উপদেষ্টা। প্রেসিডেন্ট চুপ্পুকে যেন দিতে না হয়। কারণ প্রেসিডেন্ট কাদের লোক, তা সবাই জানেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বুধবার (২২ অক্টোবর) সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় সাংবাদিকদের সঙ্গে ব্রিফকালে একথা বলেন তিনি।
ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, আজ আমরা এসেছিলাম কয়েকটি বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্যে এবং কিছু বিষয়ে আমাদের মতামত এবং এই সরকারের করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করার জন্য।
আমরা এসেছিলাম প্রধান উপদেষ্টাকে কিছু বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য। সরকারের করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করতে। আমরা দীর্ঘ আলোচনার পর সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্য হয়ে একটি সনদ স্বাক্ষর করতে পেরেছি, এ কারণে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছি।
তিনি বলেন, দীর্ঘ আলোচনার পর ৮০টির উপরে বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছি এবং সেসব বিষয়কে দ্রুত আইনি ভিত্তি দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছি। বিশেষ করে আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য যে বিষয়গুলো প্রয়োজন সেগুলোকে দ্রুত বাস্তবায়নের ঘোষণা দাবি করেছে।
তাহের বলেন, প্রধান উপদেষ্টা আমাদের সঙ্গে একমত হয়েছেন, এগুলো বাস্তবায়ন না হলে আলোচনার কোন অর্থ থাকে না।
তিনি বলেন, আদেশের মাধ্যমে সাংবিধানিক মর্যাদা দিতে হবে। এটা সংবিধানের অংশ নয়, তবে এরকম পরিস্থিতিতে সরকার প্রধান আদেশ দিতে পারেন। আশা করি উনি এ ব্যাপারে একমত হয়েছেন। আমরা বলেছি, গণভোট এবং জাতীয় নির্বাচন দু’টো ভিন্ন-ভিন্ন জিনিস আলাদা সময়ে হতে হবে। গণভোটের মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন হলে নির্বাচনের অনেক বিষয়ে পরিবর্তন হবে। সে কারণে আগে অবশ্যই গণভোট হতে হবে।
তাহের বলেন, নোট অফ ডিসেন্ট সংস্কারের কোনো আলোচনা হতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, আপনারা জানেন গণভোটের ব্যাপারে বিএনপি কোনোভাবে রাজি হচ্ছিল না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিএনপি গণভোটে রাজি হয়েছে। তারপরেও তারা একটা জটিলতা তৈরি করার চেষ্টা করেছে। তা হচ্ছে- গণভোট এবং জাতীয় নির্বাচন একদিনই হতে পারে। দুইটা একেবারে আলাদা জিনিস। একটা হচ্ছে জাতীয় নির্বাচনে জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচিত হয়ে দেশে কার সরকার চালাবে সেটা সিদ্ধান্ত। আর গণভোট হচ্ছে আমাদের কতগুলো রিফর্মস সংস্কার, যেগুলো কীভাবে সরকার পরিচালনা হবে, কীভাবে নির্বাচন সুষ্ঠ হবে, কীভাবে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা থাকবে, এসব মৌলিক বিষয়। এটার সাথে এটার কোন রিলেশন নাই। সেজন্য আমরা বলেছি- গণভোটের মাধ্যমে রিফর্মস কমিটি আলাদাভাবে এটাকে পাশ করতে হবে। জনগণ যদি চায় রেফারেন্ড, জনগণ যদি হা বলে পাস হয়ে গেল। জনগণ যদি না বলে, পাস হবে না। কারণ এটা জনগণের সর্বোচ্চ ক্ষমতা না। আর যদি জনগণ হা বলে, তাহলে সেটার ভিত্তিতেই নির্বাচনের সাথে সম্পৃক্ততা আছে। যেমন আপার হাউস। আপার হাউস ইলেকশন হবে। এখন যারা বলছেন- একসাথে হবে, তাইলে আপার হাউজ ইলেকশন পাব না। যদি এটা হয়ে যায়, এটা একটা জটিলতা। কেউ যদি এটা চ্যালেঞ্জ করে, এটা বাতিল হয়ে যাবে। এটা হচ্ছে আপনার বাচ্চা হওয়ার আগেই নাম রেখে দেওয়ার অবস্থা। ছেলে না মেয়ে আপনি জানেন না। ঠিক আছে ততক্ষণ পর্যন্ত। তো আপনার ‘আপার হাউস’ হইলই না ভোট পর্যন্ত। আপনি কাকে ভোট দিবেন সেজন্য এগুলো, আবার যেহেতু তারা গণভোট চায় নাই, জনগণের চাপে সেন্টিমেন্ট দেখে তারা রাজি হইছে কিন্তু প্যাঁচ একটা লাগায় রাখছে।
আজকে আমরা বলে আসছি, কোনো প্যাচঁট্যাচ এখানে আমরা বুঝি না, সহজ সরলভাবে আগে গণভোট হইতে হবে। কারণ দুটো আলাদা বিষয়।
আমরা বলেছি নভেম্বরের শেষের দিকে গণভোটের আয়োজন করা হোক। প্রায় এক মাসের বেশি সময় আছে। তারপরে আরো আড়াই মাস থাকবে জাতীয় নির্বাচন। সুতরাং এখানে সময়ের কোনো সমস্যা না। কারো প্রশ্ন অনেক খরচ হবে। না অনেক খরচ হবে না। কারণ আমরা যে বাক্স কিনবো দুইটা নির্বাচনের জন্য কিনবো। আমরা যে মেশিনারিস কিনবো সব দুইটার জন্য কিনবো। এখানে শুধু ছোট একটা কাগজ, আর যাতায়াত ভাড়া লাগবে। দেশের কল্যাণের জন্যে কিছু টাকা খরচ করে একটি সুষ্ঠতার সাথে যদি আমরা জাতীয় নির্বাচনে যেতে পারি, তাহলে এটার চেয়ে সবচেয়ে উত্তম কিছু হতে পারে না।
নির্বাচন কমিশন, সচিবালয়ে, পুলিশ প্রশাসনে প্রায় ৭০/৮০ শতাংশ অফিসারই একটি দলের দাবি করে তাহের বলেন, বাকিদের কাছে গেলে শুনতে হয় প্রচণ্ড চাপে আছেন। একই দল থেকে সেই চাপ আসছে। পুলিশেও একই অবস্থা আছে। একটা দল ৬৫ আর ৩৫ সারা বাংলাদেশ। এই অবস্থায় সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন থাকেই। আমরা বলেছি, আপনি কেয়ারটেকার সরকারের মতোই থাকেন। তবে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করেন এবং নির্বাচনের আগে আপনি যেখানে যেখানে রদবদল করা দরকার, আপনি করেন।
সেক্ষেত্রে উনি আমাদেরকে বলেছেন, নিজে তত্ত্বাবধায়ক থাকবেন এবং লটারি সিস্টেমে কর্মকর্তাদের পোস্টিং ঠিক করবেন। আমরা বলেছি আপত্তি নেই। তবে লটারির পিছনে যেন কোন একটা ভূত সেখানে দাঁড়াইয়া না থাকে।
যে রিফর্মস হচ্ছে এটার যে ডিক্লারেশন, এই আদেশটা কে দিবে, এ নিয়ে একটা প্রশ্ন এখন আমরা বলে আসছি, যদি আইনে কাভার করে এবং আইনগতভাবে যদি কোন ব্যত্যয় না হয় তাহলে আমরা চাই চিফ অ্যাডভাইজার এই আদেশটি দেবেন।
প্রেসিডেন্টের নামে যেন এটা না হয়। কারণ এই প্রেসিডেন্ট কাদের লোক, সেটা সবাই জানে।
বৈঠকে উনারা আমাদের বলেছেন আইনগত দিকটা পর্যালোচনা করবেন, যদি আইনগত কোন সমস্যা না হয়, তাহলে প্রেসিডেন্ট নয় এই ঘোষণাটা প্রধান উপদেষ্টাই দিবেন।
তাহের বলেন, নোয়াখালীতে ছাত্রশিবিরের কুরআন প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামে বিএনপির হামলার বিষয়টি আমরা প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। আমরা বলেছি নির্বাচনের আগেই যদি এরকম পরিস্থিতি হয়, তাহলে নির্বাচনের সময় কি হবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে আমরা কোনো আলোচনা করিনি। কারণ বিষয়টি উচ্চ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। আমরা মনে করি- এই বিষয়ে এখন কথা বলাটা ইমম্যাচিউট।
আমরা ড. ইউনুসকে বলেছি, আপনার পাশে কিছু লোক আপনাকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবে। তারা একটি দলের পক্ষে কাজ করছে। এজন্য তাকে সতর্ক থাকার জন্য দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। আমরা প্রথমে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি, সেটাতেও যদি কাজ না হয়, পরবর্তীতে যা যা করণীয় তাই করবো।
এর আগে আজ বুধবার (২২ অক্টোবর) ৬টার দিকে সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহেরের নেতৃত্বে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রবেশ করে জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধি দল।
জামায়াতের প্রতিনিধি দলে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন– সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটি এম মাসুম, রফিকুল ইসলাম খান, হামিদুর রহমান আযাদ।
ডেস্ক/ই.ই
মন্তব্য করুন: