বিগত সরকারের আমলে লক্ষ্মীপুরে একাধিকবার ছাত্রলীগ-যুবলীগের হামলায় ছাত্রদল নেতা সুলতান বাপ্পী মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন। শারীরিক অসুস্থতাও তাকে প্রায় শয্যাশায়ী করে রেখেছে। গত ৪ বছর ধরে তাকে শেকলবন্দি করে রেখেছে পরিবার। সম্প্রতি তাকে নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে বিষয়টি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দৃষ্টিগোচর হয়। বাপ্পীকে সুস্থ্য ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে তার উন্নত চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন তারেক রহমান।
সোমবার (১৮ আগস্ট) বিকেলে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি হাসান মাহমুদ ইব্রাহিম ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন নেতাকর্মীদের নিয়ে সদর উপজেলার দত্তপাড়া ইউনিয়নের রমারখিল গ্রামে বাপ্পীর বাড়িতে যান। এ সময় মামুনের মোবাইলফোনে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির ভিডিও কলের মাধ্যমে বাপ্পীর সঙ্গে কথা বলেন।
বাপ্পীকে মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) সকালে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হবে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তার চিকিৎসার সকল ব্যবস্থা করে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির।
বাপ্পী সদর উপজেলার দত্তপাড়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম-আহ্বায়ক ও স্থানীয় রমারখিল গ্রামের আইশার বাড়ির আব্দুল লতিফ সরকারের ছেলে।
বাপ্পীর ভাই মো. ছোলায়মান বলেন, ২০২১ সালে খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করার পর দফায় দফায় বাপ্পীকে পিটিয়েছে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তখন সে মাথায় আঘাত পায়। তারা রাস্তায় বলতো এতো পেটানোর পরও কীভাবে সে হেঁটে যায়। তাদের পিটুনিতে আমার ভাই মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। এরপর থেকে তাকে আমরা তিনটি শেকল দিয়ে বেঁধে রাখতাম বাড়িতে। তাকে মানসিক হাসপাতালেও ভর্তি করা হয়েছিল।
সুলতান বাপ্পী তার সুস্থতা কামনায় সকলের কাছে দোয়া চেয়েছেন। এ সময় তিনি দাবি করেছেন- তার পরিবারকে যেন উপার্জনের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।
জেলা ছাত্রদলের সভাপতি হাসান মাহমুদ ইব্রাহিম ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, বাপ্পী ছাত্রদলের সক্রিয় নেতা ছিলেন। সবশেষ খালেদা জিয়ার অসুস্থতার সময় দোয়া চেয়ে মসজিদে মিলাদ মাহফিল করলে ছাত্রলীগ-যুবলীগের দফায় দফায় হামলা-পিটুনিতে বাপ্পী অসুস্থ হয়ে পড়ে। মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় তাকে শেকল দিয়ে বেঁধে রাখা হতো। এতে দীর্ঘদিন ধরে সে শয্যাশায়ী অবস্থায় পড়ে আছে। শুয়ে থাকতে গিয়ে তার কোমড় থেকে নিচের অংশে ক্ষতও সৃষ্টি হয়েছে। দেশনায়ক তারেক রহমান তার চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন। আশা করি, বাপ্পী উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসে আবারও আমাদের সঙ্গে আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় হবে।
কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, বাপ্পীর বিষয়টি গণমাধ্যমের সহযোগিতায় আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যাবতীয় খোঁজখবর নিয়ে তাকে ঢাকায় এনে চিকিৎসা করানোর জন্য বলেছেন। এটি ইতিবাচক ঘটনা।
তিনি আরও বলেন, গত ১৭ বছর আওয়ামী দুঃশাসনের কারণে, বিশেষ করে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা ছাত্রদলের নেতার্মীদের ওপর যেরকম হামলা করেছে, আপনারা অতীতে দেখেছেন- লক্ষ্মীপুরে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আমাদের অনেক নেতাকর্মী শহীদ ও আহত হয়েছেন। ছাত্রদলের নেতা বাপ্পী তার প্রমাণ। ঢাকায় এলে আমরা তার সম্পূর্ণ দেখাশোনা করবো।
ডেস্ক/ই.ই
মন্তব্য করুন: