চাঁপাইনবাবগঞ্জের বন্যা কবলিত পাঁচটি ইউনিয়নের ৪৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। গত বৃহস্থপতিবার (১৪ আগষ্ট) জেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে এ তথ্য জানা যায়।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সূত্র থেকে জানা যায়, বন্যার পানি বৃদ্ধির কারনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শ্রেনীকক্ষে পর্যন্ত পানি ঢুকে গেছে। এমন অবস্থায় শ্রেণীকক্ষের চেয়ার টেবিল অন্যত্র উচু স্থানে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে এবং অস্থায়ী শ্রেণীকক্ষে পাঠদান কার্যক্রম চালানোর চেষ্টা চলছে। তবে বন্যার কারনে বেশিরভাগ অভিবাবক তাদের সন্তানদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠাচ্ছেন না। এছাড়া জেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক অফিস থেকে জানা যায়, বন্যার জন্য সাময়িক পাঠদান ব্যাহত হলেও পরবর্তীতে অতিরিক্তি ক্লাসের মাধ্যমে এই ব্যাহত পাঠদান পুষিয়ে দেওয়া হবে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্য মতে, এ জেলায় বন্যার কারনে ৩৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষাকার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। তার মধ্যে সদর উপজেলার ১৩ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং শিবগঞ্জ উপজেলায় রয়েছে ২২ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সদর উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো হলো: আলাতুলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ছয়রশিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রাণীনগর তারনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরআলাতুলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কামারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরজোহরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নারয়নপুর রুস্তম মন্ডলটোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জোহরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দেবীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নারায়নপুর জাওনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বৈদনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং নূরনারয়নপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এছাড়া শিবগঞ্জ উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো হলো: চরহাসানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চাপড়ীপাড়া আটরশিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাসানপুর ক্যাথাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নামোজগন্নাথপুর বাবুপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরজগন্নাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ডাকাতপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঘুঘুডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মনোহরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বালুটঙ্গি ম.আ.ক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জুয়েল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাঁকা নারয়নপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বরেন্দ্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরপাঁকা কদমতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নিশিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরপাঁকা মধ্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং চরবিশরশিয়া কালুপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের তথ্য মতে, বন্যায় জেলায় ১০ টি উচ্চ বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১টি এবং শিবগঞ্জ উপজেলায় ৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। সদর উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি হলো নারায়ণপুর এম.এম উচ্চ বিদ্যালয়। এছাড়া শিবগঞ্জ উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো হলো: চরপাঁকা উচ্চ বিদ্যালয়, পাঁকা নারায়নপুর পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়, হাসানপুর লক্ষীপুর পাঁকা উচ্চ বিদ্যালয়, চরজগন্নাথপুর উচ্চ বিদ্যালয়, চরজগন্নাথপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, জগন্নাথপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, মনোহরপুর নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়, চরজন্নাথপুর আনক কারিগরী দাখিল মাদ্রাসা এবং হাসিনপুর সীমান্ত একাডেমী।
চরজগন্নাথপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: বেলাল উদ্দিন বলেন, বিদ্যালয়ের চারপাশেই পানি। এরমধ্যে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা চালিয়ে নিতে বলেছিলেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। পানির মধ্যে অভিভাবকরা বাচ্চাদের ক্লাসে পাঠাতে অনাগ্রহী। যে কারণে সোমবার থেকে বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের নারায়ণপুর মাহমুদা মতিউল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোসা. হামিদা খাতুন বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে প্রায় ৭৯২ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। গত রবিবার বিদ্যালয়ের মাঠ আর শ্রেণিকক্ষে পানি প্রবেশ করে। ফল তারপর থেকে এখানে পাঠদান পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জেছের আলী জানান, যেসব স্কুলে পানি শ্রেণীকক্ষে প্রবেশ করেছে সেসব স্কুলের পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। আশেপাশের উচু স্থানে সাময়িক শ্রেণীকক্ষ স্থাপন করে পাঠদান চালানো হচ্ছে। তাছড়া পরবর্তীতে এই ব্যাহত পাঠদান পুনরায় দেওয়ার জন্য পরিকল্পনা করা হচ্ছে। যাতে শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে না পড়ে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল মতিন জানান, বলেন, নিম্নাঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মাঠ ও শ্রেণিকক্ষে পানি প্রবেশ করায় পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। এর মাঝেও পাঠাদান কার্যক্রম চালানোর জন্য নির্দশনা দেওয়া হয়েছে। আশা করছি পানি দ্রুত নেমে গেলে পাঠদান কার্যক্রম পুরোদমে চলবে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্থ বিদ্যালয় গুলোর তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আনিসুর রহমান জানান, বন্যার কারনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে অতিরিক্ত ক্লাসের মাধ্যমে ব্যাহত পাঠদানগুলো পুষিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
এম.এ.এ/আ.আ
মন্তব্য করুন: