প্রকাশিত:
১৬ অক্টোবার ২০২৫, ২১:৩৬
সাম্প্রতিক সময়ে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, ওয়েবসাইট, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং কিছু ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমে জুয়া, বেটিং ও পর্নোগ্রাফি সম্পর্কিত বিজ্ঞাপন ও প্রমোশনাল কনটেন্ট প্রচার করা হচ্ছে। এসব কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫ এবং পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২-এর পরিপন্থী।
এই কার্যক্রম তরুণ সমাজের নৈতিক বিকাশ, সামাজিক মূল্যবোধ ও পারিবারিক বন্ধনকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং রাষ্ট্রের নৈতিক কাঠামোর জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে। দেশের সাইবার স্পেসকে নিরাপদ, নৈতিক ও প্রজন্মবান্ধব রাখতে সরকার এসব অনৈতিক বিজ্ঞাপন প্রচার প্রতিরোধে কিছু জরুরি নির্দেশনা জারি করেছে।
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা, অনলাইন সংবাদপত্র, নিউজ পোর্টাল, স্থানীয় ও আঞ্চলিক মিডিয়া প্রতিষ্ঠান এবং ডিজিটাল বিজ্ঞাপন সংস্থা তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইট, অ্যাপ্লিকেশন বা ব্রাউজারভিত্তিক বিজ্ঞাপনের অংশে, কিংবা গুগল অ্যাডসেন্স ও অন্যান্য বিজ্ঞাপন প্ল্যাটফর্মে কোনোভাবেই পর্নোগ্রাফি, জুয়া বা গ্যাম্বলিং সম্পর্কিত বিজ্ঞাপন প্রচার করতে পারবে না। এটি সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর স্পষ্ট লঙ্ঘন, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।
দেশের সকল মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, সেলিব্রিটি, ইনফ্লুয়েন্সার ও কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে, তারা যেন জুয়া, বেটিং, পর্নোগ্রাফি বা অনৈতিক কোনো পণ্য, সেবা কিংবা ওয়েবসাইটের বিজ্ঞাপন বা প্রমোশনাল কার্যক্রমে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকেন।
এ ধরনের বিজ্ঞাপন দেয়া বা প্রচারে সহায়তা করা সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫ অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ।
এছাড়া বাংলাদেশে পরিচালিত বা বাংলাদেশি ব্যবহারকারীদের জন্য অ্যাক্সেসযোগ্য কোনো দেশি বা বিদেশি ওয়েবসাইট, অ্যাপ্লিকেশন বা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে জুয়া, বেটিং বা পর্নোগ্রাফি সম্পর্কিত কোনো কনটেন্ট, বিজ্ঞাপন বা লিংক প্রচার বা প্রচারে সহায়তা করা যাবে না। জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সি এসব কনটেন্টের মনিটরিং কার্যক্রম আরও জোরদার করবে এবং প্রয়োজনবোধে সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইট বা প্ল্যাটফর্মের বিরুদ্ধে ব্লকিং, জরিমানা বা আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
মোবাইল অপারেটর, ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী, গুগল অ্যাডসেন্স, মেটা অ্যাডসহ আন্তর্জাতিক বিজ্ঞাপন প্ল্যাটফর্মগুলোকে বাংলাদেশের প্রচলিত আইন ও নৈতিকতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্থানীয় আইন, পপ-আপ ব্লকিং এবং ফিল্টারিং নীতি কঠোরভাবে অনুসরণের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানগুলোকে ওয়েবসাইট, পত্রিকা, নিউজ পোর্টাল ও অ্যাপ্লিকেশনে ডিফল্ট অ্যাডসেন্স না চালিয়ে কাস্টমাইজড বিজ্ঞাপন ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে, যাতে জুয়া, পর্নো, গ্যাম্বলিং ও এ-সংক্রান্ত গেমিং বিজ্ঞাপন বা পপ-আপ না আসে।
সরকার জুয়ার বিজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করবে। প্রচলিত আইন ভঙ্গের ঘটনায় জনমতের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইট ব্লক করার বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করা হবে এবং এ সংক্রান্ত বিষয়ে জনসচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হবে।
সরকার মনে করে একটি নৈতিক, নিরাপদ ও সুশৃঙ্খল সমাজ গঠনে সরকারি সংস্থা, মিডিয়া, প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ও নাগরিক সমাজের সক্রিয় ভূমিকা অপরিহার্য।
দেশের সাইবার স্পেসকে নিরাপদ, নৈতিক ও প্রজন্মবান্ধব রাখতে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি), জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সি (এনসিএসএ), জাতীয় টেলিযোগাযোগ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র (এনটিএমসি), জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) এবং বাংলাদেশ ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) যৌথভাবে কাজ করছে।
ডেস্ক/ই.ই
মন্তব্য করুন: