রাজশাহী, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে দূরপাল্লার বাস চলাচল টানা পাঁচদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন হাজারো যাত্রী। মালিক-শ্রমিক বৈঠকে মজুরি বাড়ানোর বিষয়ে সমঝোতা হলেও নতুন করে শ্রমিকদের দাবি পূরণ না হওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করেছে।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজশাহীর শিরোইল বাস টার্মিনালের কাউন্টারগুলো খোলা থাকলেও বাস ছাড়তে পারেনি। ভোরে দুটি বাস ঢাকা ছেড়ে গেলেও সকাল ৮টার দিকে শ্রমিকরা বাকি বাস ছাড়তে বাধা দেন। পরে গাড়ি থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে টিকিট বাতিল করা হয়। এতে গন্তব্যে যেতে না পেরে ফিরে যান অনেকে।
ভুক্তভোগী যাত্রী আরিফুল ইসলাম জানান, ভোর থেকে টিকিট কেটে অপেক্ষা করছিলেন তিনি। হঠাৎ শ্রমিকরা এসে বাস থেকে তাকে নামিয়ে দেন। এতে তার জরুরি কাজ পিছিয়ে যাচ্ছে।
যাত্রী নাসরিন আক্তার জানান, তার স্বামী ঢাকায় হাসপাতালে ভর্তি, সকালে পৌঁছানো দরকার ছিল। কিন্তু বাস চলাচল বন্ধ থাকায় তিনি অসহায় হয়ে পড়েছেন।
আরেক যাত্রী শিক্ষার্থী রাব্বি হোসেন জানান, পরীক্ষার জন্য ঢাকায় যাচ্ছিলেন, এখন সব বন্ধ থাকায় কীভাবে যাবেন সেটি বুঝতে পারছেন না।
অন্যদিকে সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টা থেকে ভোর ২টা পর্যন্ত শিরোইল টার্মিনালে মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শ্রমিকরা।
বাস মালিকরা বলছেন, প্রতিদিন অন্তত চার থেকে ছয় হাজার যাত্রী যাতায়াতে সমস্যায় পড়ছেন। এতে দৈনিক প্রায় ৬০ লাখ টাকা লোকসান হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে সোমবার রাতে ঢাকার গাবতলীতে পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনের বৈঠকে চালক, সুপারভাইজার ও হেলপারদের মজুরি বাড়ানো হয়। তবে রাজশাহীর শ্রমিকদের একাংশ প্রতিটি গাড়ির জন্য তিনটি ফ্রি টিকিটের দাবি তুলেছেন। এ দাবিই এখন বাস চলাচলের অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বজলুর রহমান রতন বলেন, জিম্মি করে তারা দাবি আদায় করে তাহলে এটি হবে না। তাদের দাবি থাকতেই পারে, আমার দিতে রাজি আছি। কিন্তু জিম্মি করে দাবি দাওয়া পূরণ করবে সেটি হবে না।
তিনি আরও বলেন, রাস্তা থেকে যাত্রী আমরা কোনো দিনই তুলতে দেবো না। এটি একটি ভিআইপি গাড়ি। আমরা এটি মেনে নেবো না। আমাদের প্রতি দিন গাড়ে ৬০ লাখ টাকা লোকশান হচ্ছে। আমার গাড়ি চালু করতে চাই। কিন্তু তারা অযৌক্তিক দাবি মেনে নিবো না।
শ্রমিক নেতা মো. জিয়া জানিয়েছেন, ন্যায্য দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত বাস চলাচল শুরু হবে না। আজ দুপুরে নওদাপাড়া বাস স্ট্যান্ডে বৈঠকে বসে এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
এদিকে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় বিকল্প পরিবহনের খোঁজে ছুটছেন যাত্রীরা। অনেকে ট্রেনে বা ভাড়া গাড়িতে ঢাকা যাওয়ার চেষ্টা করছেন, তবে এতে খরচ বেড়ে যাচ্ছে কয়েকগুণ।
ডেস্ক/ই.ই
মন্তব্য করুন: